গল্পঃ গৌতম (মহেশ) হলেন একজন রক স্টার যিনি কিনা মানসিক ব্যাধিতে ভুগছেন যার ফলে তিনি তার শৈশবের অনেক স্মৃতি হারিয়ে ফেলেন। তবে তিনি নিশ্চিত যে তাঁর পিতামাতাকে তিনজন লোক খুন করেছে এবং তার একমাত্র লক্ষ্য প্রতিশোধ নেওয়া।
তামিল থ্রিলার, একশন, ফ্যামিলি ড্রামা উত্তরোত্তর ভারতের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি বলিউডের চেয়ে অনেক অনেক দূর এগিয়ে চলে এসেছে, তারই একটি বিশাল পার্থক্য 1 Nenokkadine. এই চলচ্চিত্রের নামের বাংলা উচ্চারণ কি হবে, আমার জানা নেই, তাই ইংরেজিতেই উল্লেখ করলাম। তেলুগুতে কোনও হলিউড জনরার থ্রিলারকে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা কীভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন তারই একটি অসাধারণ উদাহরণ হতে পারে এই চলচ্চিত্রটি।
ভারতীয় উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্রে কোনো দূর্ঘটনায় স্মৃতি হারিয়ে ফেলা, আবার এক দূর্ঘটনায় স্মৃতি ফিরে আসা, অতি পরিচিত জনরার ক্লাইমেক্স। পরিচালক একটু ভিন্নভাবে নায়কের হারানো স্মৃতি নিয়ে খেলা করেন। ভিলেনদের মাইন্ড গেম দ্বারা স্মৃতি মুছে ফেলা একটু ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে এসেছে এই ছবির ক্লাইমেক্সকে। আর কিছু মেলোড্রামা দরকার, যা কিনা যোগ করবে আরেকটু ভিন্ন মাত্রা, যেমন বাবা-মায়ের পরিচয় ভুলে যাওয়া, নিজের পরিচয় মনে করতে না পারা।
গৌতমের শৈশবকালের একটি দুঃস্বপ্ন তাকে সবসময় তাড়া করে, কিন্তু কখনোই তার পিতা-মাতার চেহারা মনে করতে পারে না। এটুকু তার স্মৃতিতে আছে, তার বাবা-মায়ের হত্যাকারী তিনজন। আত্ম পরিচয় ভোলা গৌতম একজন রকস্টার, সারা দেশে তার অনেক ফ্যান। দেশ গড়িয়েও বিদেশেও তার অনুসরণকারীর কমতি নেই। কিন্তু রকস্টার জীবন তার অতীতকে ভুলিয়ে দেয়নি। পিতা-মাতার খুনীদের হত্যা করাই তার একমাত্র নিয়ত। চলচ্চিত্রের শুরুতেই সে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং তার বাবা-মাকে খুন করেছেন এমন তিন ব্যক্তিকে হত্যা করার কথা স্বীকার কোরে। কিন্তু পরবর্তীতে এক সাংবাদিকের ক্যামেরা ফুটেজে উঠে আসে যে গৌতম একা একাই কারো সাথে মারামারি করছে, আশেপাশে কেউই ছিল না। পরবর্তীতে জানা যায়, গৌতমের মস্তিষ্কে ধূসর পদার্থের 25% ঘাটতির ফলে মস্তিষ্ক ব্যাধিতে ভুগছেন! ফলস্বরূপ তিনি হ্যালুসিনেশন থেকে তার বাবার খুনীকে হত্যা করছেন, ডাক্তারের কাছে গৌতম ব্যাখ্যা করেন যে তার বাবা-মায়ের স্মৃতি তার মনে নেই।
ওদিকে ড্যাশিং রকস্টারের এই কেস নিয়ে খুবই তৎপর সাংবাদিক কৃতি। নায়ককে তাড়া করতে করতে সে চলে আসে গোয়াতে, নায়কের ছোটবেলার স্মৃতির এক অংশ এই গোয়াতেই। সেই মাফিয়াকে খুঁজে হত্যা করাই তার টার্গেট। গৌতমের ধারণা তার ছোটবেলার স্মৃতিতে থাকা হত্যাকারীরা এখানেই থাকে।
আরও পড়ুনঃ তামিল সাইকো থ্রিলার Rastasaan রিভিউ
আসলেই কি তার বাবা-মা ছিল? সব কি তাঁর মস্তিষ্কে কল্পনার সৃষ্টি? ফিল্মের বাকী অংশগুলি এই প্রশ্নের উত্তরগুলি বরং জটিল পদ্ধতিতে উত্তর দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। চিত্রনাট্য যেভাবে চলমান ছিল তাতে অভিনবতার ছোঁয়া রয়েছে। সিনেমাটোগ্রাফিটিতে পরিচালক বেশ চতুর এবং নিস্তেজ রঙের প্যালেটগুলির সাথে একটি তীব্র মেজাজ তৈরি করে।
কিছু কিছু জায়গায় মহেশবাবুর অভিনয় বেশ তীব্র ছিল। তিনি স্বভাবজাত হাসি ছাড়াই প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ফেলেন। ছবিতে মহেশ নাচ নিয়ে কাজ করেছেন। কৃতি সাননকে তার চরিত্রকে ন্যায়সঙ্গত করার জন্য বেশ আকর্ষণীয়ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়।
চলচ্চিত্রটিকে কালজয়ী বলা না গেলেও এর চিত্রনাট্য হ্যাটস অফ পাওয়ার অধিকার রাখে। এই চলচ্চিত্রের অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলি হলিউড থেকে অনুপ্রাণিত, দমবন্ধ হওয়ার চেয়ে কম নয়। পুরো চলচ্চিত্রটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি হিসাব মেলাতে পারবেন না।
ছয়টি গান, পাঁচটি মারামারি এবং বিনোদন এবং মেলোড্রামার এই টলিউড ফর্ম্যাটটি হলিউডের স্টাইলযুক্ত সাসপেন্স থ্রিলারের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
তবে সব শেষে ছবির কিছু ক্রিটিক মন্তব্য না করলেই নয়। রোমান্টিক সীনগুলো জোর করা মনে হয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছিল অপ্রয়োজনীয়। ফাইটিং সীনগুলো আরেকটু রিয়েলিস্টিক করতে পারতেন পরিচালক। তবে বলিউড ঘরণার দর্শকদের জন্যে এই সীনগুলো যথোপযুক্ত। যদিও মুক্তির সময়ে এই সিনেমাটি ধ্বস খায়, অনেকে মনে করেন ওই মুহূর্তে বলিউডের কমেডি ম্যুভি নিয়ে যে হাইপ ছিল, সেই হাইপে দর্শকরা এমন বুদ্ধিদীপ্ত সীনগুলো সহজে গিলতে পারেনি। তবে সিনেমাটি ক্রিটিকদের অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে পরবর্তীতে।
চলচ্চিত্রটির হিন্দী ডাবিং এখনই দেখতেঃ https://youtu.be/pgWeSDHmezk