THE DIGITAL THIEF রিভিউ Ahmed Imran Halimi

তামিল THE DIGITAL THIEF রিভিউ

Thiruttu Payale 2, ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তামিল ভাষার চলচ্চিত্র। হিন্দী ডাবিং এ এই ছবিটির নাম রাখা হয় THE DIGITAL THIEF. তামিল নামকরণে বোঝার সাধ্য না থাকলেও হিন্দী নামকরণ দেখেই বুঝে ফেলা যায় ছবিটি ভার্চুয়াল জগতের চোরদের নিয়ে চিত্রায়িত।

পুলিশ বাহিনীর সৎ অফিসার সেলভামকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তিবর্গের ফোনকল ট্যাপ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়, পরবর্তীতে এই সুযোগের অপব্যবহার ঘটিয়ে খারাপ ফায়দা নিতে গিয়ে নিজেই বিপদে আটকা পরে যায়। সিনেমার পুরো গল্প তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে, যেখানে নায়ক, নায়িকা, ভিলেন সকলেই এই অপব্যবহারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায়।

এই আধুনিক যুগে যেখানে প্রযুক্তির অন্তহীন সম্ভাবনাগুলি মানুষের জীবনকে গতিশীল, আমরা এর বিবিধ খারাপ প্রভাব সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন না। এই চলচ্চিত্র দেখার পর থেকে আমি আমার ফেইসবুকে খুব বেশি নিজের তথ্য শেয়ারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। যদিও আগে থেকেই শেয়ার করা বন্ধ করে দিয়েছি। আস্তে আস্তে আরও গুটিয়ে নিচ্ছি। 

দ্য ডিজিট্যাল থিফ চলচ্চিত্রে একটি সাধারণ পুলিশ দম্পতি, সেলভাম ও তাঁর স্ত্রী আগল, যাদের জীবন প্রযুক্তির অপ্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের কারণে দূর্বিষহ হয়ে উঠছিল। তাদের সুখী জীবনে হঠাত করে অনুপ্রবেশ ঘটে মানসিক বিকারগ্রস্থ প্রযুক্তিজ্ঞানে পারদর্শী এক বুদ্ধিমান হ্যাকারের, যে কিনা ফেইসবুকে নতুন নতুন নারীদের সাথে বন্ধুত্ব করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্যবহার করে। সেলভামের স্ত্রী আগলের জীবনে ভিলেন বালাকৃষ্ণ প্রবেশ করার পর থেকেই তার  মধ্যে পরিবর্তন আসতে শুরু করে, যা সেলভামকে ভাবতে বাধ্য করে যে তাদের সম্পর্কটি যতটা স্বচ্ছ মনে হয়েছিল এতদিন, ততটা স্বচ্ছ ছিল না।

সেলভাম একজন পুলিশের ডিজিট্যাল নজরদারি বিশেষজ্ঞ এবং কিছু সন্দেহজনক ব্যক্তিদের ফোন কল ট্যাপ করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। প্রকৃতপক্ষে, তার সিনিয়র অফিসার নিজের পুলিশ ব্যাচের ব্যাচমেটদের ফোনকল অনুসরণ করার জন্য নির্দেশ দেয়, যারা পুলিশ বিভাগে নামী পজিশনে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করার সন্দেহে ছিল। সেলভাম তাঁর কর্তব্যে এতটাই ব্যস্ত থাকত যে তাঁর স্ত্রীর প্রতি মনোযোগ দিত না। অন্যদিকে ফোন কল ট্যাপ করতে গিয়ে দূর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের অনেক তলের কথা ও অনৈতিক সম্পদ লেনদেনের খবর জানতে পেরে পুলিশ বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সেগুলো নিজের কব্জায় নিয়ে আসতে শুরু করে। আস্তে আস্তে সেলভামও অনৈতিক পথে চলে যেতে থাকে। যখন সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল, বালাকৃষ্ণ(প্রসন্ন), একজন নারীখেকো, যিনি ফেসবুকের মাধ্যমে অপরিচিত নারীদের প্রভাবিত করে ব্যবহার করতেন, তার পরবর্তী টার্গেট হয়ে দাঁড়ায় সেলভামের স্ত্রী আগল। সেলভাম আগ্রহবশত তাঁর স্ত্রীর ফোনকল ট্যাপ করতে গিয়ে দেখতে পায়, সে বালাকৃষ্ণের দ্বারা ব্ল্যাকমেইলিং এর শিকার হচ্ছে। ততদিনে আগল তাঁর ভুল বুঝতে পারে। 

আরও পড়ুনঃ MAAYAVAN – রোমাঞ্চকর সাই-ফাই থ্রিলার

সেলভাম সব জেনেও না জানার ভান করে স্ত্রীর অগোচরে ভিলেনকে শায়েস্তা করার সিদ্ধান্ত নেয়, অন্যদিকে আগল সেলভামের থেকে সবকিছু আড়াল করে ভিলেনের থেকে পালানোর চেষ্টা করতে থাকে। অন্যদিকে  বালাকৃষ্ণ সেলভামের পিসি হ্যাক করে তাঁর সংগ্রহে থাকা কল রেকর্ডিং এর ফাইল খুঁজে পায়, যেখানে তাঁর কিছু অনৈতিক কর্মকান্ডের চিহ্নও ছিল, যা প্রকাশ পেলে পুলিশ থেকে সাসপেন্ড আর অপরাধীদের হাতে সেলভামের মৃত্যু ঝুঁকি পর্যন্ত ছিল। এই সুযোগে বালাকৃষ্ণ স্বামী-স্ত্রী দুইজনকেই ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে।

ছবির ঘটনাপ্রবাহ খুবই আকস্মিকতাঁর সাথে এগিয়ে চলে। সৎ পুলিশ অফিসার সেলভাম ক্ষমতার অপব্যবহার করে এর খারাপ ফায়দা নিয়ে ভাগ্য উন্নয়নের নেশায় বুদ হয়ে যাচ্ছিল, যা অনেকটাই পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহারকে নির্দেশ করে। অন্যদিকে তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্ত্রী, যে কিনা স্বামীর অনুপস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে অপরিচিত মানুষদের সাথে জড়িয়ে পড়ে, তাঁর জীবনে সকল মুহূর্তের ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে অন্যদেরও সেই তথ্যের অপব্যবহারের সুযোগ দিয়ে যায়। আরেকদিকে, ভিলেনকে মানসিক বিকারগ্রস্থ পরিবার বিচ্ছিন্ন এক ভার্চুয়াল অপরাধীর চিত্রে চিত্রায়ন করা হয়, যে কিনা ছোট ছোট ভার্চুয়াল তথ্যকে ব্যবহার করে নারীদের ফাঁদে ফেলে।

সিনেমার শুরুটা খুব ধীরে হলেও, আস্তে আস্তে ছবির ভাঁজে ভাঁজে মূল গল্প বেরিয়ে আসতে শুরু করে। ছবির শেষপর্যন্ত দুর্দান্ত থ্রিলারে ঠাসা। আর এই সিনেমা যারা সোশ্যাল ফ্রিক, তাদের জন্যে একটা সতর্কবার্তা। ডিজিটাল মিডিয়ার দুর্দান্ত এগিয়ে চলার সাথে সাথে এর অপব্যবহারও দারুনভাবে হচ্ছে। তাই নিজেকে সেইফ রাখতে কি কি করণীয়, সিনেমা শেষ পর্যন্ত না দেখলে বুঝতে পারবেন না।

আর সেই সাথে এই সোশ্যাল মেসেজও পাই যে, অনৈতিক পথে প্রাপ্ত অর্থ থাকে না শেষপর্যন্ত। আর এটাও জানতে পারি যে, মানুষের আড়ালের কথা যতটা না শোনা যায়, ততোটাই ভাল। যদি সে নিজের আত্মীয়-স্বজন হয়। আমাদের অগোচরে আমাদের নামেই নিজের পরিবারের খুবই কাছের মানুষই অন্যের কাছে গীবত করে আসছে, যা শুনলে আমরা কষ্ট পেতে পারি। 

ছবির লাস্টটুকু হয়ত সিনেমা শেষ করতেই একটা কিছু দেখিয়ে দিতে চেয়েছিল পরিচালক। তাই আমার কাছে শেষের চিত্রায়ন/স্ক্রিপ্ট খুব ভাল একটা বাস্তব মনে হয়নি। তবে গড়পড়তা ছবিতে দারুন একটা সোশ্যাল মেসেজ আছে, যেটা অবশ্যই সকল ধরণের দর্শকের কাছেই আশা করি ভাল লাগবে। 

আরও পড়ুনঃ Theeran – রিয়েল লাইফ সুপার কপ থ্রিলার