শহরে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। একজন পুলিশ বুঝতে পেরেছিল যে খুনগুলোর মোটিভ প্রায় একই রকম। মায়াবান চলচ্চিত্রে স্বন্দীপ কিশান একজন সৎ পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যিনি তাঁর শহরে সংঘটিত কয়েকটি ক্লুলেস খুনের কেস সমাধানের চেষ্টা করছেন।
মায়াবান পর্যালোচনা
মায়াবান মূলত নিউরোসায়েন্স ভিত্তিক সাই-ফাই থ্রিলার। সাই-ফাই থ্রিলারগুলো যেমন কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা ভবিষ্যত থিউরিকে যোগসূত্র করে তৈরি করা হয়, মায়াবানেও পরিচালক এমনই একটি প্লটকে নিয়ে তৈরি করেছেন। কোন এক সিনেমা আড্ডায় একবার শুনেছিলাম নতুন কোনো সায়েন্টিফিক ইনোভেশন বাজারে আসার পূর্বে আমজনতাকে সেটায় অভ্যাস করাতে সিনেমাকে ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে মানুষ খুব সহজেই নতুন ইনোভেশনকে মেনে নিতে পারে। সিনেমার প্লটে আপনি তেমনই কিছু মশলা পাবেন। চলচ্চিত্রের গভীরে যেতে খানিকটা সময় নিবে, তবে একবার যখন মূল প্লটে ঢুকে যাবেন, এর রোমাঞ্চ থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
কুমারান (স্বন্দীপ কিশান), একজন ইন্সপেক্টর, যখন তিনি একটি মার্ডারের মধ্যে ঢুকে পড়ে, তখনই গল্পের শুরু হয়। খুনী অপরাধীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেই চরম্ভাবে আঘাত পেয়ে তিনমাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন। চিকিৎসা শেষে মানসিক ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে গিয়ে তাঁর পরিচয় হয় মনোবিজ্ঞানী অধীরাইয়ের (লাবণ্য ত্রিপাঠী) সাথে। আধীরাইয়ের পরামর্শের বিরুদ্ধে গিয়েই কুমারান কাজে জয়েন করেন। কর্মস্থলে ফিরে আরেকটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় সম্পৃক্ত হন, হত্যাকান্ডের ক্লু শণাক্ত করে বুঝতে পারেন, এই হত্যাকান্ডটিও তাঁর চোখের সামনে ঘটা পূর্ববর্তী হত্যাকান্ডের সাথে হুবুহু মিলে যায়। কিন্তু পূর্বের খুনী ব্যক্তিটি ইতোমধ্যে তাঁর হাতেই মারা গিয়েছিল। এরকম পরিস্থিতিতে আবারও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন কুমারান। পরবর্তীতে আরও দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। রুথরান (ডানিয়েল বালাজি), একজন মোটিভেশনাল স্পীকার, এই ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে পুলিশের নজরদারিতে আসে।
মায়াবান সম্পর্কে অন্যতম দারুণ বিষয় হল সিনেমাটির অপরাধীর তথ্য প্রকাশের আগ পর্যন্ত আপনাকে অনুমান করে যেতে হবে। চলচ্চিত্রের শুরু থেকেই আপনি আন্দাজ করবেন, হয়ত কোন সিরিয়াল কিলার, কিংবা সাইকোপ্যাথ, কিংবা কোনো পূর্ব শত্রুতার বলি হচ্ছে ভিক্টিমরা। শেষমেশ স্টোরিতে আপনি এমন কিছুই পাবেন, যেটা হয়ত আপনি ভাবেননি। সায়েন্স আর সিরিয়াল কিলিংকে সহজাতভাবে এক দুর্দান্ত সন্নিবেশ ঘটানোর চেষ্টা করেছেন পরিচালক। এর ক্রেডিট অবশ্যই গল্পটির চিত্রনাট্যর প্রাপ্য।
বেশ গ্রিপিং চিত্রনাট্য সহ নিউরোসায়েন্স ভিত্তিক দুর্দান্ত দক্ষিণী এই সিনেমা মায়াবান। অনর্থক পাব গান ব্যতীত পুরো চলচ্চিত্রই আকর্ষণীয় ছিল এবং পুরো চলচ্চিত্রে বোরিং হওয়ার মতো কিছুই মনে হয়নি। তবে কিছু কিছু অংশ পরিচালক অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করেছেন বলে মনে হয়েছে।
পরিচালকের প্রথম সিনেমা এটি। সেটা জানার পর মনে হলে এইক্ষেত্রে এসব ছোট-খাট বিষয় ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখা শ্রেয়। সিনেমাটি আপনার চিন্তার জগতকে আরেকটু বার্নিশ করে দিবে। দক্ষিণী সিনেমা খুব স্বল্প বাজেটে একের পর এক দূর্দান্ত চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র অঞ্চলভিত্তিক সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কারণে তাদের এই দারুণ সিনেমাগুলো লাইমলাইটে আসে না। সাই-ফাই লাভারদের এই সিনেমা মাস্ট ওয়াচিং।
সিনেমাটি দেখতেঃ Maayavan – Hindi Dubbed