e0a6ade0a6bee0a687e0a6afe0a6bce0a6be e0a686e0a6aee0a6bee0a695e0a787 e0a69ae0a695e0a6b2e0a787e0a69f e0a695e0a6bfe0a6a8e0a787 e0a6a6e0a6bee0a693 e0a6a8e0a6be Ahmed Imran Halimi

“ভাইয়া, আমাকে চকলেট কিনে দাও না”

গতকাল সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে। আজ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খুব খুশি হয়েছিলাম। বাসার সামনেই রাস্তায় পানি জমে গেছে। তার মানে স্কুলে যাওয়া হবে না। বন্ধুদের সাথে খেলবো। আব্বু অফিসে যাওয়ার আগে বলে গেলেন যেনো বাসা থেকে বের না হই।

আমি রাহাত। ক্লাস ফোরে পড়ি। আর আমার ছোট ভাইয়ের নাম রাশেদ। আমরা ২ ভাই প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে ঝগড়া বাঁধাই। আম্মু এসে সবসময় আমাদের মারামারি থামায়। বড় বলে সব দোষ আমার ঘাড়েই পড়ে। আর রাশেদের যেন কোন দোষই নাই। সবাই রাশেদকে অনেক ভালোবাসে। এটা-ওটা কিনে দেয়। আর আমকে কিনে দেয় ডিকশনারি। এটাই নাকি আমার এখন বেশি দরকার!

আব্বু আম্মুর মতে, রাশেদের সাথে মারামারিতে আমাকেই হার মানতে হবে। কারণ আমি ওর বড় ভাই তো! রাশেদ যখন ছিল না তখন আব্বু আম্মু আমাকে অনেক আদর করতো, আর এখন সব যেন ওর জন্যই।

রাশেদ সবে মাত্র ক্লাস টুতে পড়ে। এখনই আমি যা করতে নিব ও তার বিপরীতে কিছু একটা করবেই। আজ যখন আমি বললাম স্কুলে যাবো না। রাশেদ তখনই আম্মুর কাছে ছুটে গিয়ে বায়না ধরল যে ও স্কুলে যাবে। এই বলেই কান্নাকাটি শুরু করে দিল। আমার ইচ্ছে করছিল গালে একটা সজোরে চড় দিয়ে বসি। কতো বড় ফাজিল! যাই হোক, আম্মু আর আমাদের স্কুলে যাওয়ার জন্য খুব একটা জোর করলো না।

সকাল থেকে এক নাগাড়ে ৩ ঘন্টা পড়ছি। পড়ছি না আসলে, আম্মুকে দেখাচ্ছিলাম। মন পড়ে হাছে পাড়ার মাঠে। আমার এখন খুব খেলতে যেতে ইচ্ছে করছে নিচে গিয়ে। কিন্তু আম্মু যেতে দিবে না। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এলো! রাশেদ যদি আম্মুর কাছে যেয়ে কান্নাকাটি করে তবে আম্মু হয়তো মানবে। রাশেদকে ডেকে বললাম, লক্ষ্মী ভাইয়া আমার, তুমি আম্মুকে গিয়ে বলো আমাদেরকে যেন একটু বাইরে যেতে দেয়। রাশেদ আম্মুর কাছে গিয়ে রীতিমত কান্নাকাটি শুরু করে দিল।

আমি আম্মুর কাছে গিয়ে বললাম, যাই না আম্মু, মাত্র আধ ঘন্টা খেলব। আম্মুকে অতিকষ্টে রাজি করালাম। বললো, শুধু গেটের সামনে পর্যন্ত বেরুতে। রাস্তার পানিতে নামতে বারণ করে দিল। আধ ঘন্টার মধ্যেই চলে আসতে বলল। সিড়ি দিয়ে নামার সময় রাশেদ আইসক্রিম খেতে চাইল।

আমি বললাম, “আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লাগবে।”

“তাহলে চকোলেট খাবো।”

বললাম, “আচ্ছা পরে কিনে দিবো।”

রাশেদ জিদ করল, “না, আমি এখনই খাবো।”

আমি বললাম, “আমরা আসার সময় কিনে ফিরব। “

রাশেদ রাজি হয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি ভাইয়া?”

“এই তো, পাশেই খেলতে যাচ্ছি।”

“আম্মু বকা দিবে না?”

“আম্মু জানতেই পারবে না। আর জানলে কি হয় তা পরে দেখা যাবে।”

গেটের সামনে আসতেই রাশেদ হঠাৎ বললো,

ভাইয়া, আমি খেলতে যাবো না। আমার কেমন যেন ভয় করছে।

আমি বললাম, “কিসের ভয়? দেখ, সবাই কেমন মজা করে খেলছে, আমরাও খেলবো।”

আমাদের বাসার সামনে পুকুরটা ভরে গেছে। রাস্তায় হাঁটু সমান পানি। আমরা দুজনে বন্ধুদের সাথে খেলতে লাগলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম, আমার চারপাশে রাশেদ নেই। কিছুদূরে কতগুলো ছেলেমেয়ে চিৎকার করছে। আমার কেন জানি হাত-পা অবশ হয়ে গেল। আমি দৌড়ে ওই ছেলে-মেয়েদের কাছে গেলাম। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার ছোট ভাই রাশেদ পানিতে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে।

আমি এখন কি করবো? সাঁতারও জানি না। রাশেদকে বাঁচাবো কিভাবে? বাসার দিকে দৌড়ে গেলাম। প্রতিটি মুহূর্ত আমার কাছে অনেক বড় মনে হচ্ছে। আমি বাসায় এসে আম্মুকে বললাম, আম্মু রাশেদ পানিতে পড়ে গেছে। আম্মু চিৎকার দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এলো।

আমার আম্মুকে এভাবে কখনো কাঁদতে দেখিনি। আম্মু পাগলের মতো চিৎকার করে কাঁদছে। আম্মুর কান্না দেখে আমি কাঁদছি। অনেকে তখন পানিতে নেমে রাশেদকে খুঁজছে, কিন্তু ওকে পাওয়া যাচ্ছে না। রাশেদ ডুবে গেছে। আব্বুর অফিসে ফোন করা হলো। আম্মু বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। জ্ঞান ফিরলেই রাশেদকে খুঁজছে। পুকুরে জাল ফেলা হলো। চারপাশে অনেক মানুষ ভিড় করেছে। কিন্তু রাশেদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আমার হঠাৎ মনে হলো আমি রাশেদকে অনেক ভালোবাসি। ওকে না দেখে আমি একদিনও থাকতে পারবো না। ওকে ছাড়া রাতে ঘুমাতে পারি না। আমাদের সব ঝগড়া ও মারপিটের কথা আমি একদম ভুলে যাই। রাশেদের যদি কিছু হয় তবে আমি পাগল হয়ে যাবো। বৃষ্টি আরো বেড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যেই সবাই পানিতে নেমেই রাশেদকে খুঁজছে। প্রায় আধ ঘন্টা খোঁজার পর রাশেদকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেলো। কিছুই আর বাকি রইল না।

আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। মাত্র আধঘন্টার ব্যবধানে আমার ছোট ভাই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। আমার বাবা-মায়ের কান্না আরো হাহাকার আমার মনে প্রচন্ড কষ্ট তৈরি করলো। আজ যেন বৃষ্টি থামছেই না। মনে হচ্ছে আমাদের সবার যন্ত্রণায় আকাশও অঝোরে কাঁদছে। আমার কানে শুধু একটা কথাই বাজছে, ‘ভাইয়া আমি খেলতে যাবো না, আমার ভয় লাগছে।’ আর কেউ কোনদিন আমার কাছে এসে বলবে না, ‘ভাইয়া আমাকে চকলেট কিনে দাও না…….।

আরও গল্পঃ ব্যর্থ প্রণয়