take off e0a6aee0a78de0a6afe0a781e0a6ade0a6bf Ahmed Imran Halimi

TAKE OFF – সত্য ঘটনালম্বনে নির্মিত মালায়ালাম চলচ্চিত্র

“Take Off” ২০১৪ সালে গৃহযুদ্ধের সময় ইরাকে আটকা পড়ে থাকা ভারতীয় নার্সদের উদ্ধার করার রিয়েল লাইফ স্টোরি দ্বারা অনুপ্রাণিত কাহিনীনির্ভর চলচ্চিত্র। সিনেমাটি ইরাকে জঙ্গী আক্রমণে আটকে পড়া দৃঢ়প্রাণ সাহসী নার্স সামিরার জীবনাবলম্বনে নির্মিত। ভাল উপার্জনের আশায় আরও ৪৫ জন ভারতীয় নার্সদেরকে সাথে নিয়ে ইরাকের তিকৃতির এক হাসপাতালে কাজ করতে যান সামিরা। ইরাকে যাওয়ার কদিন পরেই ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা তাদের হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তারা কি শেষপর্যন্ত এই সঙ্কট থেকে বেঁচে ফিরতে পারে? এমনই বাস্তব কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমাটি।

এডিটর থেকে চলচ্চিত্র নির্মাতা বনে যাওয়া মহেশ নারায়নের পরিচালিত Take Off বেশ কয়েকটি কারণে ২০১৭র বহুল প্রতীক্ষিত একটি চলচ্চিত্রের মর্যাদা ছিনিয়ে নেয় – এতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছে মালায়ালাম জনপ্রিয় নায়িকা পার্বতী, আরও ছিলেন ফাহাদ ফাসিল যিনি অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকায়। সিনেমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, ২০১৪ সালে আইএস জঙ্গিরা শহরটি দখল করার সময় ইরাকের সাদ্দাম হুসেনের শহর তিকৃতে আটকে পড়া ৪৬ জন ভারতীয় নার্সকে উদ্ধারের বাস্তব গল্পের উপর নির্ভর করে চিত্রায়ন করা হয়েছে।

সিনেমাটির প্রথামার্ধ জুড়ে সামিরার (পার্বতী) ইরাকে আসার পূর্বের নাটকীয়তা দেখানো হয়, ত্রিশোর্ধ্ব ডিভোর্সী সামিরা লড়ে যাচ্ছিল পারিবারিক লোন পরিশোধ এবং একটু ভালভাবে বেঁচে থাকার আশায়। পূর্বতন গোড়া শ্বশুড় বাড়িতে নিজের ঘর সামলানোর চেয়ে তার দৃঢ় পেশাজীবি মনোভাবকে মেনে নিতে পারেনি বিধায় সেখান থেকে সম্পর্কচ্ছেদ ঘটে। ডিভোর্সী সামিরাকে ভালবেসে ফেলে তার সহকর্মী শাহিদ। শীঘ্রই সামিরা তাঁর সহকর্মী শাহিদকে বিয়ে করে ভাল উপার্জনের সন্ধানে অন্যান্য ভারতীয় নার্সদের সাথে ইরাকে গমন করে। বিধ্বস্ত ইরাকে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল এক ভয়াবহ বিপদগ্রস্থ জীবন। ইরাকে যাওয়ার অল্প কদিন পরেই ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা শহরটি দখল করে নেয়। যুদ্ধাঞ্চল থেকে জীবিত ফিরে আসার নিরন্তর লড়াই করতে থাকে সামিরা ও শাহিদ। এদিকে ভারতীয় নার্সদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্যে ইরাকে অবস্থিত প্রজ্ঞাবান ভারতীয় রাষ্ট্রদূত মনোজ (ফাহাদ ফাসিল) যুক্ত হন আরেক সংগ্রামে। ভারত এবং ইরাকী সরকার কেউই সহায়তা করতে পারছিল উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে নার্সদের বাঁচানোর উদ্যোগ নিতে। পার্বতী ও অন্যান্য নার্সরা আইএস-এর বন্দীদশায় কিভাবে জড়িয়ে পড়ে এবং কীভাবে তারা বন্দীদশা থেকে শেষমেশ মুক্তি পায়, জানতে দেখতে হবে ম্যুভিটির বাকি অংশ।

উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় কুয়েতে অবস্থিত ভারতীয়দের সরিয়ে নেওয়া নিয়ে নির্মিত বলিউড বিগ বাজেট চলচ্চিত্র এয়ারলিফটের সাথে টেক্কা দেওয়ার মতই এক দুর্দান্ত চলচ্চিত্র টেক অফ। বিগ ইন্ডাস্ট্রি বলিউডের সাথে মালায়ালাম চলচ্চিত্রের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সক্ষম সিনেমাটিকে তাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্যে এক বিশাল অর্জন বলেও অনেকে মনে করেন।

TAKE OFF – MALAYALAM Rescue Cinema

সামিরার চরিত্রে অভিনয় করা নায়িকা পার্বতী ছিল এক কথায় দুর্দান্ত – পেশা ও পরিবার, জীবনের দুটি গুরত্বপূর্ণ অংশের ভারসাম্য বজায় রাখার সংগ্রামে লিপ্ত দৃঢ়প্রাণ সামিরা যেন হাজার হাজার সংগ্রামী নারীর ভিতরের রূপটাই সিনেমার রীলে চিত্রায়ন করেছেন। ভারতীয় নার্সদের দলটি জঙ্গিদের দ্বারা বন্দীকালীন জীবন সংকটেও সামিরা তাঁর সন্তানকে নিয়ে শান্ত থাকার চেষ্টা করেছিলেন। অন্যদিকে জঙ্গীদের হাতে অত্যাচারিত শাহিদকে ফিরিয়ে আনতে অসুস্থ শরীর নিয়ে ভারতীয় এম্বাসীতে যেয়ে ক্রদনরত সামিরার মধ্যে দেখতে পাই স্বামীর প্রতি ভালোবাসায় অনুরক্ত এক নারীর প্রতিকৃতি।

শাহিদের চরিত্রে অভিনয় করেন মালায়লাম তারকা কুনচাকো, তাকে বেশ সংযত ও মডেস্ট অভিনেতা হিসেবে পর্দায় উপস্থাপন করা হয়, যিনি সামিরার জীবনে প্রত্যাশার কিরণ রূপে আবর্তন করেন। ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসাবে ফাহাদের সাহসিকতা এবং জরুরি মুহুর্তে তড়িৎকর্মা মনোভাব তাঁর প্রতি দর্শকের স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে আসে; উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি ফাহাদের অবজ্ঞা এবং অসহযোগিতা প্রকাশ ও নিজের সিদ্ধান্তের প্রতি অবিচলতা তাঁর ন্যায়পরায়ণ ক্যামিওতে এক ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করে। 

চিত্রনাট্যে পার্বতীর দুর্দান্ত অভিনয় চলচ্চিত্রের শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। চলচ্চিত্রের প্রথমার্ধ নাটকীয়তাপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও একবারও মূল চিত্রনাট্য থেকে দূরে সরে যায়নি। পরিচালক চিত্রনাট্যের প্রথমার্ধে সিনেমায় ভারতীয় নার্সদের দুর্দশাকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যেন তাদের যন্ত্রণা ভাল থাকার জন্যে সংগ্রাম, পরিবারের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ মনোভাব দর্শকরা যেন উপলদ্ধি করাতে পারে। দর্শককে সিনেমার শেষ দৃশ্য পর্যন্ত পর্দা থেকে চোখ না সরাতে বাধ্য করবে।

টেক অফ বাস্তব জীবনের উপর নির্মিত একটি অসাধারণ সিনেমা এবং এই ঘটনার উপর পরিচালকের নিজস্ব মেধার সমন্বয়ে এটি আরও আকর্ষণীয় সিনেমাটিক আবহ তৈরি করে যা বলিউডের একই ঘরনার অন্যান্য সিনেমার চেয়েও দুর্দান্তভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। সিনেমাটির হিন্দী ডাবিং দেখুন ইউটিউবে।