আজ সকাল সাড়ে ৮ টায় শেষ করলাম ৫ পর্বের Netflix Original ওয়েব সিরিজ “TYPEWRITER”. ফজরের নামাযের পর সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকে, সেরকম নিস্তঃব্ধ পরিবেশে ক্ল্যাসিক্যাল ভৌতিক ক্রাইম থ্রিলার বেশ জমে। ওয়েবসিরিজটা দেখতে ইচ্ছে হয়েছিল এর অন্যতম চরিত্র বাঙালী যীশু সেনগুপ্ত আর কিশোর নির্ভর থ্রিলার দেখেই। যীশু সেনগুপ্ত বেশিরভাগ সময় কোলকাতার আন্ডাররেটেড কমেডি ধাচের চরিত্র প্লে করলেও, কাহিনী নির্ভর চলচ্চিত্রগুলোতে তাকে অনেক ডেডিকেশন নিয়ে অভিনয় করতে দেখেছি। এই ওয়েবসিরিজেও তার ব্যতিক্রম ছিল না।
.
এই ওয়েবিসিরিজের চরিত্রগুলো অতোটা শক্ত বা পপুলার ক্যারেক্টার না হলেও পাঁচ পাঁচটা এপিসোড দেখে সবার প্রতি একটা অনবদ্য ভালো লাগা জন্মে গেছে। আর এদের সকলকেই সিনেমা বা সিরিয়ালের পার্শ্বচরিত্র, বিজ্ঞাপনী মডেল, উপস্থাপক হিসেবে চিনে থাকবেন। তাদের পরিচয় আর নাইই দিলাম।
.
গল্পে আসা যাক। ভারতের সমুদ্রতীরবর্তী গোয়ার বার্দিজ নামক এলাকা ও একটি রহস্যময় বই “Ghost of Sultanpore” কে ঘিরে এই ঘটনা আবর্তিত হয়। খ্রিস্টান অধ্যুষ্যিত এই অঞ্চলে (সম্ভবত পরাধীন ভারতবর্ষে ইংরেজ/পর্তুগীজ/ফরাসী জাহাজ এই অঞ্চলে ভিড়ত দেখে ধর্মযাজকরা এখানকার মানুষদের প্রথম খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করতে পেরেছিলেন) এক মহিলা কিছু দৈব শক্তি অর্জন করে যা দিয়ে সে মানুষকে দূর থেকেই হাতের ইশারায় হত্যা করতে পারত। তবে সে এই অলৌকিক ক্ষমতাকে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে ব্যবহার না করে খুবই সাধারণ জীবনাচরণ করত। কোনো এক কারণে এসব জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর তাকে মেরে ফেলা হয়। মৃত্যুর আগে সে তার একমাত্র সন্তানকে এই ক্ষমতাগুলো দিয়ে যায়। দূর্ভাগ্যবশত বড় হয়ে তার সন্তান সেই ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে রূপান্তরিত হয় “ফাকির” নামক এক বিদ্ধংসী কালো জাদুকর হিসেবে।
.
আরও পড়ুনঃ তামিল সাইকো থ্রিলার RATSASAN রিভিউ
.
অন্যান্য ভৌতিক গল্পের মতোই এই “ফাকির” নিজের ক্ষমতাবৃদ্ধি করতে নানারকম অপকর্মে লিপ্ত ছিল। একসময় সে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। ফাঁসির আদেশ হয় তার। ওদিকে ভৌতিক গল্প খরায় ভোগা বার্দিজ ভিলার জমিদার ও লেখক ম্যাথিউজ ফাকির কে ফাঁসি দেওয়ার পূর্বে তার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন কোনো ভৌতিক গল্প লিখতে উদ্যত হয়। এই কৌতুহলী আচরণ ম্যাথিউজের জীবনে কাল হয়ে আসে।
.
ফাকির তার জীবনের গল্প জানানোর শর্ত হিসেবে ম্যাথিউজের থেকে একটা কাঠের টুকরো চেয়ে নেয়। ফাকিরকে জেলে চোখ বন্ধ ও পিচমোড়া করে হ্যান্ডকাফ লাগানো অবস্থায় রাখা হত। তার হাত আর চোখ দিয়ে যে কারো ক্ষতি করতে পারত। ফাকির লেখককে গল্প বলতে বলতে তার হাতে থাকা কাঠের টুকরো দিয়ে তার নিজের অবয়বের একটা পুতুল বানিয়ে ওই পুতুলের মধ্যে নিজের সকল ক্ষমতা ও আত্মাকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিল।
.
ম্যাথিউজ পুরনো আমলের জমিদার দার্শনিকদের মতো গল্প লিখতে টাইপরাইটার ব্যবহাত করত। আর এই টাইপরাইটারেই একসময় আটকে যায় ফাকির এর আত্মা।
.
ম্যাথিউজ তার বিধবা মেয়ে ও নাতনী নিয়ে বার্দিজ ভিলায় বসবাস করত। পরবর্তীতে ম্যাথিউজ ও তার বিধবা মেয়ে টাইপরাইটার এ আটকে থাকা অতৃপ্ত আত্মার কারণেই মৃত্যুবরণ করে। ম্যথিউজের মৃত্যুর পর “Ghost of Sultanpore” বইটি ফাকির এর অতৃপ্ত আত্মা টাইপরাইটারে লিখে রেখে যায়। বইটির লেখক হিসেবে পরিচিতি পায় ম্যথিউজ। এই বইয়েই মূলত ফাকির তার জাদুকরি বিদ্যা, হত্যাযজ্ঞ ও পূণরুত্থান নিয়ে লিখে রেখে যায়।
.
মা ও নানার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ম্যাথিউজের নাতনী ছোট্ট জেনিকে বার্দিজ ভিলা থেকে শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিয়ের পর স্বামীর কর্মস্থল পরিবর্তনের সুবাদে দুই সন্তানকে নিয়ে আবার তার নানুর ভৌতিক বার্দিজ ভিলায় ফিরে আসে। আর গল্প শুরু এখান থেকেই।
.
পড়াশোনার ব্যাপারে উদাসীন তিন স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়ে ভূত নিয়ে কৌতুহলী ছিল, যারা কিনা Ghost of Sultanpore বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বার্দিজ ভিলা নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিল। দলের মেয়ে সদস্য স্যাম ও অপর দুই ছেলে সদস্য বান্টি আর গাবলু। পরবর্তীতে জেনির ছেলেও তাদের দলে যোগ দেয়। স্যামের বাবা ছিল বার্দিজের পুলিশ ইন্সপেক্টর। জেনি বার্দিজ ভিলায় আসার পর তার সাথে জড়িত একে একে তিনজন চরিত্রের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ওদিকে ফকির এর ছেলে যীশু সেনগুপ্ত তথা অমিত রায় তার মৃত বাবাকে ফিরিয়ে আনতে হন্য হয়ে খুঁজছিল ওই টাইপরাইটার মেশিনকে। জেনির দিকে সন্দেহের তীর ছুড়ে মারা হয় তিন খুনের সাসপেক্ট হিসেবে। শেষপর্যন্ত অমিত রায় কি তার মৃত অতৃপ্ত বাবাকে আবার ফিরিয়ে আনতে পারবে? স্যাম, বান্টি ও গাবলু কি সফল হয় বার্দিজ ভিলার রহস্য উন্মোচনে? এই সব জানতে অবশ্যই পাঁচটি পর্বই না টেনে দেখতে হবে( Intro ও Outro বাদে)।
.
পুরো ঘটনাপ্রবাহ আমার বর্ণনা করা সিকুয়েন্সে দেখানো হয়নি। শুরু হয়েছিল জেনির বার্দিজ ভিলায় ফিরে আসা থেকে। গল্পের ফাঁকেফাঁকে আগের রহস্যগুলো দেখানো হয়। জেনির স্বামী পিটারের সাথে এক মহিলার অবৈধ সম্পর্ক, ব্ল্যাকমেইলিং এসব নিয়ে অযাচিত কিছু ঘটনাপ্রবাহ দেখিয়ে কাহিনী দীর্ঘায়ত করা হয়েছে, যার সাথে গল্পের কোনো সম্পর্ক পাইনি।
.
যারা কালোজাদুকে বিশ্বাস করেন, তাদের কাছে গল্পটা একইসাথে বেশ ভাল ও রহস্যময় লাগবে। যারা করেন না, তারা রহস্যের সাথে সাথে কিছুটা বিরক্তও হতে পারেন।
.
IMDb র্যাংকিং এ ১০ এ ৬.৫ দেওয়া হয়েছে। আমি ১০ এ ৭.৫ দিলাম।
.
পুরোটাই আমার একান্ত ব্যক্তিগত রিভিউ।
.
Pingback: তামিল সাইকো থ্রিলার RATSASAN রিভিউ – Entrepreneur | Blogger | Digital Marketing