e0a6b0e0a6bee0a69ce0a6a8e0a780e0a6a4e0a6bf e0a6a8e0a6bfe0a6b0e0a78de0a6ade0a6b0 e0a6b8e0a6bee0a689e0a6a5 e0a687e0a6a8e0a78de0a6a1e0a6bfe0a6afe0a6bce0a6bee0a6a8 e0a69ae0a6b2e0a69ae0a78de0 Ahmed Imran Halimi

রাজনীতি নির্ভর সাউথ ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র ARAMM

রাজনীতি নির্ভর চলচ্চিত্র ভারতীয় উপমহাদেশে দারুন সাড়া ফেলে। উপমহাদেশের দূষিত রাজনীতি নিয়ে জনগনের স্বভাবতই বিদ্বেষ অনেক। অসুস্থ রাজনীতিকে হটিয়ে সুস্থ ধারার রাজনীতিকে প্রাধাণ্য দেওয়া চলচ্চিত্রগুলো দর্শকের মনে বিশেষ স্থান করে নেয়। আর এইক্ষেত্রে দক্ষিণের পরিচালকরা আরও এক ধাপ বেশি উসকে দেয় কাহিনী নির্ভর চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে। এমনই একটি চলচ্চিত্র Aramm, হিন্দী ডাবিং এ যেটি মুক্তি পেয়েছিল Tejasvini নামে।

আরাম গোপী নাইনার রচিত ও পরিচালিত একটি তামিল ভাষার চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রে নায়িকা নয়নতারা অভিনয় করেছেন একজন জেলা কালেক্টর এর ভূমিকায়।  চলচ্চিত্রটি ২০১৭ সালের নভেম্বরে মুক্তি পায়। রিলিজের পরে, চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা কুড়োয় এবং বক্স অফিসেও বেশ সফল হয়।

এক জেলা কালেক্টর Madhivadhaniর, যিনি পেশাদার জীবনে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন যখন একটি ছোট গ্রামের ধানসিকা (মহালক্ষী) নামের এক মেয়েকে খুড়ে রাখা উন্মুক্ত কুয়ো থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক হেনস্থা ও গ্রামবাসীদের ভতসর্নার সম্মুখীন হতে হয়।

চলচ্চিত্রটির শুরু কুয়োতে আটকে পড়া এক শিশুর উদ্ধার কাজের বিষয়ে জবাবদিহি করতে আই এ এস অফিসার মাধবধানী উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তার প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার দৃশ্যপট থেকে। মাধবধানী উদ্ধারকাজ নিয়ে বর্ণনা করার আগে ধানসিকার পরিবারকে পরিচয় করিয়ে দেয় দর্শকের সামনে।  ছোট্ট এক গ্রামে যেখানে ধানসিকার পরিবার বসবাস করে, সমুদ্রের কাছাকাছি এই অঞ্চলে খাবার পানির বেশ অভাব। স্থানীয় রাজনীতির কারণে গরিব অসহায় মানুষরা সুপেয় পানি পায় না, অন্যদিকে গভীর কুয়ো থেকে সংগ্রহ করা পানি ব্যবহার প্রভাবশালীদের দালান নির্মানে। সেরকমই অঞ্চলের কালেক্টর হিসেবে পরিচালক পরিচয় করিয়ে দেন মাধবধানী নামক এক নিষ্ঠাবান ও সৎ অফিসারকে। এখানে মাধবধানীকে খুবই সূক্ষভাবে পরিচালক আদর্শিক নারী হিসেবে চিত্রায়ন করেন।

ধানসিকার পরিবার ওই অঞ্চলের অন্যান্যদের মতোই অসহায়। তার পরিবারে মা-বাবা ছাড়াও, বড় ভাই ও অল্পবয়স্ক মামা আছে। অভাব-অনটনের মধ্যে ধানসিকার মা স্বপ্ন দেখেন স্কুল পালিয়ে  সাঁতার করতে ভালোবাসা ছেলেকে বড় এথলেট বানাবেন। অন্যদিকে বাবা, যিনি ছোটবেলায় কাবাডি খেলোয়ার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন, তিনি ছেলেকে শুধু পড়াশোনাই করাতে চান, কেননা তিনি মনে করেন তাদের মত পরিবার থেকে খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন শুধুই একটা আড়ম্বরতা।

মাধবধানী অন্যান্য সরকারি অফিসারদের মত জনগণের সমস্যা পাশ কাটিয়ে না গিয়ে মানুষের সমস্যা সমাধান করতেই তার প্রধান কর্তব্য বলে মনে করেন। তাই খুব অল্পদিনেই এক অঞ্চলের পানির সমস্যা সমাধান অরে দেন। ওদিকে ধানসিকাদের পরিবার ভালোই চলছিল, খেলতে গিয়ে হঠাত ফসলী জমিতে খুড়ে রাখা ৩৬ ফুট কুয়োতে পড়ে যায়। কালেক্টর মাধবধানীর নেতৃত্বে গ্রামের কাঁচা পথ পেরিয়ে ফায়ার বিগ্রেডের টীম ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ২ ঘন্টা পড়ে। ঘটনাস্থলে আসতে আসতেই মাধবধানী ওই অঞ্চলের রাস্তাঘাটের ভয়াবহ দুর্দশা, প্রয়োজনীয় স্থানে ব্রীজ-কালভার্টের ঘাটতি প্রত্যক্ষ করেন।

ওদিকে গ্রামের জনগণ সরকারের এই অবহেলা, তাদের প্রতি অবিচারে ফুঁসছিল। ভিক্টিমের আত্মীয়-স্বজন ফায়ার বিগ্রেডের যন্তপাতির ঘাটতি, দায়িত্বহীন আচরণ নিয়ে কালেক্টরের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। চপলমতি কালেক্টর ভালভাবেই পরিস্থিতি শান্ত রেখে উদ্ধারকার্য পরিচালনা করতে থাকেন।

আরও পড়ুনঃ তামিল সাইকো থ্রিলার RATSASAN রিভিউ

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে টিভি মিডিয়ার আগ্রহের লক্ষ্যবস্তু ছিল শিশু ধানসিকার উদ্ধারকাজ,  টেলিভিশনে এই নিয়ে চলছিল সংলাপ, তর্ক-বিতর্ক ও সরকারের সমালোচনা। এদিকে কুয়ো খুড়ে উন্মুক্ত করে রাখার দায়ে জমির মালিককে গ্রেফতারের আশ্বাস দেওয়াও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নড়েচড়ে বসে। তারা নানানভাবেই কালেক্টরকে সুপাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। সঠিক যন্ত্রপাতি না থাকায় কয়েকবার চেষ্টা করেও উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয় ধানসিকাকে। এরপর সেনাবাহিনী এনে মাটি খুড়েও চেষ্টা চালানো হয়, সেখানেও ব্যর্থ। আস্তে আস্তে আয়ু ফুরিয়ে আসছিল ধানসিকার। আর গ্রামবাসী ফুসছিল সরকারের উপর। এরই মধ্যে আরেকটি শিশুকে পাঠিয়ে ধানসিকাকে উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেয় মাধবধানী। হয় দুইজনই বাঁচবে, নয়তো একজনকে বাঁচাতে গিয়ে আরেক শিশুকেও মরতে হবে।

কি হয়েছিল এরপর? স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, গ্রামবাসীকে রাজি করিয়ে কি পেরেছিল সে? কে এগিয়ে আসে সেই মুহূর্তে? শেষপর্যন্ত কেনোই বা মাধবধানী পদত্যাগ করে  সরকারি চাকরি থেকে? জানতে হলে দেখে শেষ করতে হবে প্রায় ১১০ মিনিটের এই চলচ্চিত্রটি। বোরিং ফীল করবেন না। এই ম্যুভি দেখতে দেখতে ২০১৪ সালে ঢাকায় খুড়ে রাখা গর্তে আটকে মারা যাওয়া শিশু জিহাদের সাসপেনশন পাবেন।

চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা এই ছবিকে ৫ এ ৩.৫ দিয়েছেন। পরিচালক বেশ নাটকীয়ভাবে চলচ্চিত্রটি চিত্রায়ন করেছেন। চরিত্রগুলো বেশ বাস্তবিক ছিল। তেমন একটা আদিখ্যেতা দেখা যায়নি পুরো চলচ্চিত্রে। ডায়ালগ নির্বাচনে বেশ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। চলচ্চিত্রটি রাজনীতির বাস্তবিক একটা অপব্যবহারকে দর্শকের মানস্পটে একটা সুন্দর বার্তা রেখে যাবে আশা করি।

চলচ্চিত্রটি এখনই দেখে ফেলুন ইউটিউবে। পাবেন হিন্দি ডাবিং-এ।