বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে স্বাস্থ্যসেবার মানে ইতালি বিশ্বে দ্বিতীয়। করোনার সংক্রমণে ইতালি এখন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। মৃত্যু সংখ্যায় অনেক আগেই চায়নাকে ছাড়িয়ে গেছে তারা। গত দিনও ২৪ ঘন্টায় মারা গেছে ৭৯৩ জন, মৃত্যু কার্ভ উর্ধ্বগমনশীল, যেন নামার কোনো লক্ষণই নাই৷ ইতালির প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সেরা স্বাস্থ্যসেবার শক্তিমত্তা নিয়েও কাল বিদ্ধস্ত হয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলছেন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছু করার নেই তাদের হাতে।
জার্মানিতে ২ দিনে ৭০০০ রোগী শনাক্ত। অন্যদিকে মৃত্যু হারে এরপরের অবস্থান পার্শ্ববর্তী স্পেন, যাদের স্বাস্থ্যসেবা বিশ্বে ৭ নম্বর। স্বাস্থ্যসেবায় সেরা হওয়ার মাপকাঠি হলঃ স্বাস্থ্যসেবায় কয়টি লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছে, মেডিসিন পর্যাপ্ততা, জনপ্রতি প্রফেশনাল চিকিৎসকদের অনুপাত, অবকাঠামো, সেবার মান, স্বাস্থ্যসেবায় খরচ ইত্যাদি বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করে তালিকা করা হয়। সেইদিকে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা র্যাংকিং এ ৮৮ তম, যা কিনা দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান ছাড়াও চায়নারও আগে। হ্যা, চায়নারও আগে। তবে উচ্চ-মধ্যম আয়ের সোশ্যালিস্ট জাতি চায়নার এই উদ্ভুত পরিস্থতিতে যতটুকু মোকাবেলার সক্ষমতা দেখিয়েছে, তা কি আমাদের আছে?
চায়নার সকল ডাক্তার-নার্সরা ppe সুবিধা পেয়েছে, ৫ দিনে আইসোলেশনের জন্যে আলাদা হাসপাতাল তৈরি করেছে, কড়াকড়িভাবে জরুরি মুহূর্তে উহান রাজ্য লক ডাউন করে দিতে পেরেছে, আক্রান্ত অঞ্চলগুলো স্টেরেলাইজার দিয়ে জীবানুমুক্ত করা হচ্ছে। কিছু কিছু ট্রাফিক পুলিশকে বিশেষ গ্লাস দেওয়া হয়েছে, যা পরিধান করেই আশেপাশে অবস্থিত অস্বাভাবিক তাপমাত্রার কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করে কোয়ারেন্টাইনে রেফার্ড করতেছে।
এসবের কিছুই আমাদের নেই। ইতালি, স্পেন, জার্মানীর স্বাস্থ্য সেবার কথা তুললাম এটা বোঝাতে এত সক্ষমতা নিয়ে নতুন একটা জীবানুর বিরুদ্ধে তারা কতটা নাজেহাল হয়ে গেছে৷ এরা সবই বস্তুবাদী দেশ, না সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে, না এরা এত রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রতি অস্বাভাবিক করুণা দেখায়, না এরা বাসায় ফিরে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে
থাকবেন এই সই করিয়ে ছেড়ে দিয়ে নিজের ঘরে সুইসাইড বোম্ব পুষতেছে। তাও এরা কোনোমতেই পারতেছে না। শুধুমাত্র চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিষ্কার না হওয়ার ফলে।
আর আমরা এখনও কোনো পরিকল্পনা না নিয়ে দিব্যি দৈনন্দিন জীবনযাপন করতেছি। আমরা সবকিছুর ফয়সালা ধর্ম গ্রন্থ থেকে খুঁজতে যাই, যারা এখনও মনে করি ভাইরাস বহনকারী কারো সাথে কোলাকুলি করলেও সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাসের কারণে বেঁচে যাব।
এইভাবে বারবারই ভেবে যাই পৃথিবী ছিদ্র হয়ে ডুবে যাচ্ছে, আর আমরা ফাঁকফোকর দিয়ে বেঁচে যাব। মসজিদুল হারাম প্রথমবারের মত জামাতে নামায বন্ধ হয়ে গেল। কোনো দাজ্জাল আসা লাগে নাই, কোনো বহিঃশক্তির আক্রমণও করার প্রয়োজন হয় নাই। আমাদের এইখানে একবার ছড়ানো শুরু হলে, মহামারীর সাথে কৃত্রিম খাদ্য সংকটও দেখা যাবে।
আর যাদের এই মুহূর্তে বাংলাদেশ নিয়ে জরুরি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল, দেশের কোনো খারাপ পরিস্থিতি হলে সেইসব জননেতা, মন্ত্রীরা কই পালাবেন? পালানোর জায়গাগুলো এখন করোনা জম্বিতে আক্রান্ত। নিজের দেশে স্বাস্থ্যসেবার নামে কোটি কোটি টাকার অপচয় করিয়ে এখন সামান্য কিছু সেইফটি ইকুয়েপমেন্ট ডাক্তারদের দিতে পারতেছেন না। এরাই কিন্তু চিকিৎসা করবে তখন।