e0a69ae0a6b2e0a69ae0a78de0a69ae0a6bfe0a6a4e0a78de0a6b0e0a787e0a6b0 e0a686e0a6aee0a787e0a6b0e0a6bfe0a695e0a6be e0a68fe0a6ace0a682 e0a695e0a6b0e0a78be0a6a8e0a6be e0a6a8e0a6bfe0a6afe0a6bce0 Ahmed Imran Halimi

চলচ্চিত্রের আমেরিকা এবং করোনা নিয়ে ট্রাম্পের ৭ টি উদ্ভট বক্তব্য

গত ১০ই এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে একদিনেই ২০০০ এর অধিক করোনা পজিটিভ রোগী মারা গেছে। তাদের আক্রান্তের সংখ্যা এখন সাড়ে ৫ লাখের এর অধিক। করোনা ছড়িয়ে পড়া মোকাবেলায় পুরোপুরি ব্যর্থ তারা। ওদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুরো বিশ্বে করোনা ছড়িয়ে পড়ার শুরু থেকেই একের পর এক উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে আমেরিকানদের স্বান্তনা দিয়ে আসছিল। তার দাবি ছিল, এই ভাইরাস আমেরিকায় আসার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। বেশ অহমিকা ছিল তার ভাষণে। যেন যুক্তরাষ্ট্র সৃষ্টিকর্তার বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট কেউ!


যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সচিব জানুয়ারির ২৮ তারিখ এক মেইল বার্তায় জানান আমেরিকায় করোনা আসার সকল পথ বন্ধ। তারা যেকোনো প্রকার ভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুত। তারপর এক মাসের মধ্যে আমেরিকায় করোনায় আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিটি মারা যায়। এরপর একমাস ৫ দিনের মধ্যে আমেরিকায় মৃত্যু সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১০ হাজারে৷ আর পরের ১০ হাজার মৃত্যু নিশ্চিত হতে সময় নেয় মাত্র ৬ দিন!

donald trrump Ahmed Imran Halimi
ডোনাল্ড ট্রাম্প


প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুরু থেকেই করোনা ভাইরাসকে বেশ হালকাভাবে নেয়৷ আমাদের দেশের বাচাল মন্ত্রীদের মতোই তিনি বিভিন্ন রকম অযৌক্তিক, উদ্ভট ক্লেইম করে আসছিল। গবেষণা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের শীর্ষ দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েও একের পর এক ভুল-ভাল তথ্য তুলে ধরেছেন তার বক্তব্যে। প্রশাসনের ঢিলেমীর সুযোগে খুবই বেখাপ্পা ছিল আমেরিকানদের জীবনযাত্রা। চীনাদের থেকে এই রোগ আমেরিকায় আসতে আসতেই বিলীন হয়ে যাবে, এমনই সরল বিশ্বাস ছিল আমেরিকানদের মনে। 


বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্প করোনা ভাইরাসের নতুন নতুন ওষুধের নাম ঘোষণা দেয়, কয়দিন পরই আবার সেটা ভুল প্রমাণিত হয়। তখন আবার সেই দোষ চাপিয়ে দিত তার সচিবদের উপরে। 


করোনায় কুপোকাত আমেরিকা হলিউডের সিনেমার গল্পে রোগ-জীবাণু, এলিয়েন, জোম্বিদের বিরুদ্ধে কল্পিত প্রযুক্তি দিয়ে লড়াই করে বহুবার বিজয়ী হয়েছে। যখনই পৃথিবী কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হত, কোনো নায়কের আগমণ হয় আমেরিকাকে বাঁচানোর জন্যে। বাস্তবতায় সিনেমার সেই নায়কদের না দেখা গেলেও কোটি প্রাণের ভরসা ট্রাম্পের মত কমেডিয়ানরা মঞ্চ গরম করে রেখেছে। একদিন পুরো পৃথিবীতে করোনা দূর হয়ে যাবে ঠিকই, তখন হলিউডও এমন কোনো স্ক্রিপ্ট দিয়ে করোনা মোকাবেলার দুর্দান্ত একটা গল্পের ফাঁদ পেতে অস্কারজয়ী সিনেমা বানিয়ে ফেলবে।

wwz Ahmed Imran Halimi
World War Z 3D


 ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলার পর আমেরিকার নিরাপত্তা এত শক্তিশালী করা হয়েছিল যে গত ২০ বছরেও মোট এতগুলা অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি তাদের। বিশ্বের সেরা নিরাপত্তা, সেরা গবেষণাদল, সেরা সেরা প্রযুক্তি, এত এত ইন্টেলিজেন্স ফোর্স নিয়েও আমেরিকা এখন ফ্লু এর কাছে সারেন্ডারড। তাদের কল্পনাতেও ছিল না এভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে হবে। উদ্ভট উদ্ভট বক্তব্য নিয়ে আসা ট্রাম্প এখন ঘোষণা দিয়েছেন, মৃত্যু লাখের ঘরে রাখা যেতে পারলেই আমেরিকার জন্যে বিজয় হবে। 


আসুন দেখি মহামারি জুড়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু উদ্ভট বক্তব্যের নমুনা


“You can call it a germ, you can call it a flu, you can call it a virus, you know you can call it many different names. i’m not sure anybody knows what it is.”


ট্রাম্প বেশ দূশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন করোনাকে কি বলে ডাকবেন। ফ্লু, জীবানু নাকি ভাইরাস। কিন্তু করোনা তো এই তিনের সমণ্বিত এক ভয়ংকর জীবাণু অস্ত্র।


“I Don’t think it’s hoarding, I think it’s maybe worse than hoarding, But check it out.”


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যের গভর্নররা জানিয়েছেন যে মহামারী মোকাবেলায় তাদের প্রয়োজনীয় চিকিত্সা সরঞ্জামের একটি সামান্য অংশই তারা পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নিউ ইয়র্কে কয়েক হাজার ভেন্টিলেটর দরকার ছিল, তবে তারা কেবল সামান্য কিছুই পেয়েছে। হঠাৎ করে এই চিকিৎসা সামগ্রীগুলোর চাহিদা বৃদ্ধির কারণ স্পষ্ট – একটি নতুন ভাইরাসের মহামারী দেখা দিয়েছে যা স্বাস্থ্যসেবায় এক বিশাল এবং আকস্মিক চাপ তৈরি করে।

“Americans will have access ‘to vaccines, I think, relatively soon”


ট্রাম্প মন্তব্য করেন, আমেরিকা খুব শীঘ্রই ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে ফেলবে। এর মধ্যে ট্রাম্প নিজেই কয়েকবার মেডিসিন আবিষ্কার করার কথা নিশ্চিত করেও প্রত্যাখ্যান করেন। বিশেষজ্ঞরা বাচাল ট্রাম্পকে আগেই সতর্ক করেছিলেন যে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করে বাণিজ্যিকীকরণে ণ্যুনতম ১ বছর থেকে ১৮ মাস সময় নেয়। এটি জানানো সত্ত্বেও, ট্রাম্প ২ মার্চ উত্তর ক্যারোলিনায় একটি সমাবেশে বলেছিলেন যে “তুলনামূলকভাবে শীঘ্রই” একটি ভ্যাকসিন তৈরি করবে আমেরিকা।


“I’ve always known this is a real – this is a pandemic. i felt it was a pandemic  long before it was called a pandemic. I’ve always views it as very serious”


করোনা মহামারি পর্যায়ে পৌছাবার পূর্বেই দূরদর্শী ট্রাম্প জেনে ফেলেছিলেন যে এটি মহামারী হবে। শুধু তার ভাবনাটুকু নিজের মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখায় বিশ্ববাসী একটু দেরিতে জানে। আর তিনি সিরিয়াসও ছিলেন এই ব্যাপারে। বাস্তবে, তিনি ইস্টারকে ঘিরে সামাজিক দূরত্বের নিষেধাজ্ঞাগুলি তুলে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে এটিকে আরও জটিল করেছেন – এই নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ার প্রতিবাদে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে হাসপাতালগুলিতে অসুস্থ ও মারা যাওয়া রোগীরা উপচে পড়বে।


“Anybody that needs a test gets a test. We- they’re there. They have the tests. And the tests are beautiful.”


আমেরিকায় টেস্টিং কীটের প্রাচুর্যতা ছিল প্রথম দিক থেকেই। কারও মধ্যে এর উপসর্গ দেখা দিলেই পরীক্ষা করা হয়েছে। ভিত্তিহীন ভাবে, ট্রাম্প দাবি করেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে বেশ দুর্দান্ত কাজ করছে। জানুয়ারীর প্রথম দিকেই তিনি বলেছিলেন পরিস্থিতি “সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে” আছে। মাত্র ছয় সপ্তাহ পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মহামারীটির নতুন বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। বাস্তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের টেস্টিং কিটগুলির মারাত্মক ঘাটতির মুখোমুখি রয়েছে, টেস্টিং সিস্টেমের কিছু ত্রুটিগত সমস্যা ছিল। ধনী বা বিখ্যাত ব্যক্তিদের খুবই সহজে পরীক্ষা করতে দেওয়া হয় এবং সাধারণদের এর জন্য লড়াই করতে হয়।


“It’s going to disappear. one day it’s like a miracle – it will disappear.”


ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প এই উক্তি দেন,  তখনও আমেরিকায় কোনো মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়নি। ট্রাম্প মনে করেছেন যে কোনো এই ভাইরাস হঠাতই বিশ্ব থেকে উধাও হয়ে যাবে কোনোপ্রকার ভ্যাকসিন/ওষুধের ভূমিকা ছাড়াই। কিন্তু এরই মধ্যে ৪০০ বার মিউটেশন করে এই ভাইরাস হয়ে উঠেছে আরও শক্তিশালী।


“Nobody knew there would be a pandemic or epidemic of this proportion.”


ট্রাম্প কল্পনাও করতে পারেনি মহামারি এভাবে গ্রেট আমেরিকার অবস্থা নাজেহাল করে দিবে। ওবামা প্রশাসনের সময় আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল মহামারি মোকাবেলায় ৬৯ পৃষ্ঠার একটি নথি তৈরি করেছিল। যেখানে মহামারি প্রতিরোধে প্রশাসনের কর্মপরিকল্পনা, ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত দিক নির্দেশনা রাখা হয়। ওবামা প্রশাসন ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর সেই নির্দেশনাপত্রকে অবহেলা করে বাতিলের খাতায় ফেলে রাখে ট্রাম্প প্রশাসন। যার দরুণ এখন বিশাল ঝুঁকিতে আমেরিকা।