e0a695e0a78be0a6afe0a6bce0a6bee0a6b0e0a787e0a6a8e0a78de0a69fe0a6bee0a687e0a6a8e0a787 e0a6b6e0a6bee0a6b0e0a780e0a6b0e0a6bfe0a695e0a6ade0a6bee0a6ace0a787 e0a695e0a6b0e0a78de0a6aee0a695e0a7 Ahmed Imran Halimi

কোয়ারেন্টাইনে শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকুন

করোনা ভাইরাস মহামারীতে আক্রান্ত বিশ্ববাসী। এই মুহূর্তে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে চলছে লক ডাউন। লক ডাউনে সবাই নিজ নিজ ঘরে নিজেদের আবদ্ধ করে রেখেছেন। বাইরে বের হওয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ এই মুহূর্তে। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, সকল প্রকার কাজই এই মুহূর্তে থেমে গেছে। অলি-গলিতে এখন শুধুই রাজত্ব করছে বেওয়ারিশ কুকুরের দল। আর যেখানে মানুষ বেপরোয়া, সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে। মানুষকে বাধ্য করছে ঘরে থেকে এই ভাইরাস থে বাঁচতে এবং অন্যদের বাঁচাতে।

এমন সময়ে আমরা দৈনন্দিন জীবনে হয়ে পড়ছি বেশ অলস। বাইরে বের হওয়া প্রয়োজন হচ্ছে না বলে স্তিমিত হয়ে গেছে আমাদের হাঁটাহাঁটি, কায়িক পরিশ্রম ও দৈনন্দিন ব্যায়ামে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। খুব অল্পদিনের বিরতি হলে হয়তবা বলা যেত এই লকডাউনে আমাদের স্বাস্থ্যের উপর বিশেষ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আমরা এখন অনিশ্চিত একটি বিরতিতে কাটাচ্ছি, যেটি আগামী কয়েক মাসেও শেষ হবে কিনা বলা যাচ্ছে না।

আপনি কি চিন্তা করে দেখেছেন, এমন এক দীর্ঘ বিরতিতে আমরা রয়েছি, যখন বাড়ি শিশু, কিশোর, যুবক থেকে শুরু করে কর্মজীবি বাবাও ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে। বয়স্ক ব্যক্তিদের এরকম সময়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ব্যাপক। আর যুবকদের স্বাস্থ্যও অনায়াসেই মুটিয়ে যেতে পারে। আমাদের হাতে এখন অনেক সময় রয়েছে, আমরা চাইলেই কিছু ঘরোয়া এক্সারসাইজ করে নিজেদের স্বাস্থ্যকে সুগঠিত রাখতে পারি। আমাদের দৈনন্দিন গ্রহণ করা ক্যালরির একটা অংশকে বার্ণ করে নিজেদের বাঁচাতে পারি ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। ভয়াবহ বলছি এই কারণে, কেননা দীর্ঘ বিরতিতে অলস জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেলে আমরা কর্মজীবনে নিজেদের পূর্বের অবস্থায় ফেরাতে বেশ কঠিন হয়ে যেতে পারে।

আমরা প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করে থাকি। পূর্ণবয়স্ক একজন ব্যক্তি প্রতিদিন ২০০০ থেকে ২৫০০ ক্যালরি শক্তি খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করা উচিত। এই শক্তির পরিমাণ ব্যক্তির ওজন, উচ্চতা ও বয়সের উপর নির্ভর করে। দৈনন্দিন কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের এই শক্তির একটা বিরাট অংশই পুড়ে আমাদের শরীরে এই এনার্জি চর্বি আকারে জমতে দেয় না। দৈনন্দিন হাঁটা-চলা, ঘরোয়া ব্যায়াম, কায়িক পরিশ্রম, শারীরিক পরিশ্রম, ভারী এক্সারসাইজ ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের এনার্জি বার্ণ হয়ে থাকে।

তবে যারা ভারী ব্যায়াম করে থাকে, তাদের ২৫০০ ক্যালরির বেশি গ্রহণ করতে হয়। কেননা তারা ব্যায়ামের মাধ্যমে প্রচুর বার্ণ করে, স্ট্যামিনা ধরে রাখতে এই অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করত হয় তাদের। এজন্যে আবার চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করাও বাঞ্চণীয় নয়।

আমরা কায়িক পরিশ্রম না করলেও প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরি বার্ণ হয়ে যায়। এটি নির্ভর করে ব্যক্তির ওজনের উপর। ৭০ কেজি ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতি ঘন্টায় ৪৬ ক্যালরি বার্ণ করে। আর পুরো রাত ঘুমানোর জন্যে বার্ণ হয় ৩২২ গথেকে ৪১৪ ক্যালরি। ৮০ কেজি ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ঘন্টায় ৫৬ ক্যালরি শক্তি বার্ণ করে। আর পুরো রাত ঘুমানোর জন্যে ৩৯২ থেকে ৫০৪ ক্যালরি শক্তি। সুতরাং গাণিতিক ভাবে ধরা যায় ৬৫ থেকে ৭৫ কেজি ওজনের একজন ঘরে বসে থাকলে দৈনিক ১০৫০-১২০০ ক্যালরি শক্তি খরচ করে। অন্যদিকে ৭৫-৯০ কেজি ওজনের পুর্ণবয়স্ক ব্যক্তি খরচ করে ১২০০-১৪০০ ক্যালরি শক্তি। এবার চিন্তা করে দেখুন আপনি যদি প্রতিদিন ২০০০-২৫০০ ক্যালরি গ্রহণ করে শুধু শুয়ে-বসে, টিভি দেখে, ফোন চালিয়ে কাটিয়ে দেন আপনার শরীরে জমা হচ্ছে অতিরিক্ত ১০০০- ১২০০ ক্যালরি শক্তি। আপনি যদি দুই তিনমাস এভাবে কাটিয়ে দেন এই শক্তি কিভাবে আপনার শরীরকে স্থূল করে দিবে, ভেবে দেখুন।

অনেক কিছু জানলাম, এবার চলুন কিছু উপায় নিয়ে কথা বলি। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা জানিয়েছে এই লকডাউন পরিস্থিতিতে শারীরিকভাবে সুস্থ-সবল থাকতে শারীরিক ব্যায়ামের বিকল্প নেই। তারা প্রস্তাব করে দৈনিক ৭৫ মিনিট ভারী ব্যায়াম কিংবা ১৫০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করে নিজেকে সুস্থ রাখতে।  বিভিন্নরকম শারীরিক কসরতের মাধ্যমে ব্যস্ত রাখতে পারেন কোয়ারেন্টাইনের এই সময়টাকে। এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত ও আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামির্শ দেওয়ার চেষ্টা করলাম।

বাড়িতে এক্টিভ থাকার চেষ্টা করুন

বাড়িতে শুধু বসে না থেকে কিছু এক্টিভিটিতে অংশ নিতে পারেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় দিন। ঘরের বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করুন। নিজের বাসার রাধুনী, হতে পারে আপনার মা কিংবা আপনার স্ত্রী, তাকে রান্নার কাজে সাহায্য করুন। বাড়ির বাগানে কাজ করুন, কিংবা এই সময়ে একটি বাগান তৈরি করে ফেলতে পারেন। ঘর মোছা, নিজের রুম গোছানোর কাজে লেগে যেতে পারেন।

অনলাইনে এক্সারসাইজের ক্লাস করুন

ঘরোয়া ভাবে ব্যায়াম করতে চান, কিন্তু কোনো উপকরণ নেই? কোনো উপকরণ ছাড়াই প্রতিদিন আপনি কিছু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করে নিজের স্বাস্থ্যকে সুগঠিত রাখতে পারেন। অনলাইনে ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করার অনেক টিউটোরিয়াল দেখে নিতে পারেন। কিন্তু আমরা টিউটোরিয়াল দেখতে যতটা ভালবাসি, সেটা বাস্তবায়নে ততোটাই অলস। একটা নোট বানান। সেখানে আপনার সাপ্তাহিক টার্গেট তৈরি করুন। আপনার যদি ব্যায়ামে অভ্যস্ততা না থাকে, তবে প্রথম দুই-তিন সপ্তাহে টার্গেট অল্প রাখুন। বেশি টার্গেট রাখলে সেটা ফীল আপ না করার দরুন ব্যায়াম ছেড়ে দিতে পারেন।

কি কি ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করবেন? আমাদের হাত, পা, পেট এবং উরু এই চারটি অংশকে ব্যায়ামের মাধ্যমে শেইপে রাখা অত্যন্ত জরুরি। এই চারটিকে শেইপে রাখতে পুশ আপ, সীট আপ, স্কোয়াট, লেগ লিফট এই চারটি করার পরামর্শ রইল। প্রথম সপ্তাহে প্রতিটি ব্যায়াম ২০ বার করে করবেন। টার্গেট রাখবেন সপ্তাহে ৪ দিন সময় দেওয়ার। ৭ দিনে ৭ দিন করার টার্গেট কখনোই রাখবেন না। তাহলে দেখা যাবে আপনি অনেক দিন টার্গেট মিস করে ফেললে খারাপ লাগতেছে। এরপরের সপ্তাহ থেকে ৫ বার করে বাড়াবেন। প্রথম চার সপ্তাহে বাড়ানোর গতি অল্প রাখবেন। এরপরের মাস থেক ১০ বার করে বাড়ানোর চেষ্টা করবেন। এখন দেখা যেতে পারে আপনার শরীরে ধীরে ধীরে বাড়ানোটা নিতে পারতেছে না। তাহলে না বাড়িয়ে যতটুকু টার্গেট পূর্বের সপ্তাহে ছিল, সেটা ধরে রাখবেন। ভুলেও কমাবেন না। ধরে  রাখতে রাখতে আপনার স্ট্যামিনা বাড়তে থাকবে। ধীরে ধীরে আর বাড়ানোর এনার্জি আসবে।

উঠে দাঁড়ান

এই লেখাটি লিখতে লিখতে দেখলাম আম অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি। তাই একটু উঠে দাঁড়িয়ে হালকা শারীরিক কসরত করে আবার লিখতে বসলাম। হ্যা, সারাদিন শুয়ে থেকে কিংবা ল্যাপটপের সামনে বসে কাজ করতে করতে দেখা যাচ্ছে আমাদের শরীর ঝিম ধরে যাচ্ছে। চোখের উপর চাপ পড়তেছে, শরীরের মাংশপেশী ধরে আসতেছে। এমতাবস্থায় যখন-তখন দাঁড়িয়ে পড়ুন। হাত দিয়ে পায়ের বুরো আঙ্গুল ধরার চেষ্টা করুন। পুরো বাসায় একটা চক্কর দিন। হাত-মুখ ধুয়ে আসুন। এক গ্লাস পানি খান। সবচেয়ে ভাল হয় ৩০ মিনিট পর পরই যদি এটি করেন।

শান্ত রাখুন নিজেকে

মেডিটেশন ও দীর্ঘ নিঃশ্বাস আপনাকে ভিতর থেকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এইসময়ে মেডিটেশনকে খুব বেশি জোর দিবেন। অনেকেই মানসিকভাবে আতংকগ্রস্থ হয়ে আছেন। এইজন্যে ডীপ মেডিটেশন খুবই জরুরি এই সময়ে। এছাড়াও আপনি যে ধর্মের হয়ে থাকেন না কেন, আপনার ধর্মীয় কার্যকলাপে একটা নির্দিষ্ট সময় কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে আত্মিকভাবে প্রশান্তি লাভ করবেন।

পুষ্টিকর খাবার খান

এখন বাইরে গিয়ে হাই ক্যালরির ফাস্ট ফুড খাওয়া খুব একটা হচ্ছে না। বাড়িতে রান্না করা এরা খাবারটাই খাচ্ছি। তবুও আমাদের ভাবতে হবে আমরা সঠিক প্রক্রিয়ায় পুষ্টিযুক্ত খাবার খাচ্ছি কিনা। এই সময়ে নিজেকে ভাইরাস থেকে বাঁচাতেও আমাদের ইমিউনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে, এমন খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। আমাদের দৈনন্দিন খাবারে খাদ্যের প্রয়োজনীয় ৬ টি উপাদান সুষমভাবে আছে কিনা, দেখতে হবে। আমিষ জাতীয় খাবারের পাশাপাশি বেশি বেশি ভিটামিনসমৃদ্ধ শাক-সবজী খেতে হবে। রাতে এক গ্লাস দুধের ব্যবস্থা করতে পারেন। গরমে এখন খুব সহজেই শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। প্রতিদিন চেষ্টা করবেন ১০-১২ গ্লাস পানি খেতে। আমরা যারা বাসায় আছি, তারা প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় হাত ধুয়ে পানির অপচয় না করে পানি বেশি বেশি খাবো। একমাত্র বাহির থেকে এসেই হাত-মুখ ধোয়া উচিত।

হিসেব রাখুন

আপনি কত ক্যালরি দৈনিক গ্রহণ করছেন, কোন খাবারে কেমন পুষ্টিমান রয়েছে, এগুলো হিসেব রাখার চেষ্টা করতে পারেন। এখন বিভিন্ন এপে এই তথ্যগুলো জানার সুযোগ রয়েছে। আপনার গ্রহণ করা খাবারের ডাটা ইনপুট করে সহজেই জানতে পারবেন এই তথ্যগুলি।

ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়ামের হিসেব রাখারও অনেক মোবাইল এপ পাবেন। এই এপসমূহ ব্যবহারের সুবিধা হল আপনি টার্গেট সেট করতে পারবেন, এবং সেগুলো ফীল আপ করে জানতে পারবেন আপনি কতটুকু ইম্প্রুভ করতে পেরেছেন। Simple Design LTD এর পুশ আপ, সীট আপ, পুল আপ, স্কোয়াট করার আলাদা চারটি এপ রয়েছে। এগুলোতে আপনি আপনার সাপ্তাহিক ব্যায়ামের টার্গেট সেট করতে পারবেন। বডিতে যুক্ত করে ব্যায়াম করতে পারবেন। এছাড়াও 7 Minute Workout নামে তাদের আরেকটি ফ্রি ভার্সন এপ দিয়ে ৭ মিনিটে পুরো বডি ওয়ার্ক আউট করার ব্যায়াম করতে পারবেন। সবই ফ্রি হ্যান্ড। সেখানে আপনি ব্যায়ামের ডাটা রেখে আপনার শারীরিক পরিবর্তনের হিসেব কষতে পারবেন। এত এপ না নামিয়ে Adidas Training by Runtastic – Home Workout এই একটি এপ নামিয়েই সব কিছু এক এপেই সাজিয়ে নিতে পারেন। আর এই এপগুলো গুগোল ফিট এপের সাথে sync করে এনালাইসিস করতে পারেন আপনার শারীরিক পরিবর্তন।